ঋতু পরিবর্তনে রাজশাহীতে বেড়েছে রোগব্যাধি আক্রান্তর সংখ্যা

ঋতু পরিবর্তনে রাজশাহীতে বেড়েছে রোগব্যাধি আক্রান্তর সংখ্যা

ঋতু পরিবর্তনে রাজশাহীতে বেড়েছে রোগব্যাধি আক্রান্তর সংখ্যা
ঋতু পরিবর্তনে রাজশাহীতে বেড়েছে রোগব্যাধি আক্রান্তর সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঋতু পরিবর্তণের কারণে রাজশাহীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই রামেক হাসপাতালের মেডিসিন ও চর্ম বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন। এখন শীত প্রায় শেষ। হালকা গরম অনুভূত হচ্ছে। সকাল শেষে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম। দিন শেষে সন্ধ্যায় নামছে হালকা ঠান্ডা। বিছানায় ফ্যান ছেড়ে অনেকে কম্বল ও লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমোচ্ছেন। অন্য সময় ফ্যান চালাতে হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার সকালে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে তাপমাত্রা বেড়েছে।

জানা গেছে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রামেক হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে মেডিসিন, শিশু ও চর্ম বিভাগে। হাসপাতালে গত শুক্রবার পর্যন্ত ভর্তি রোগির সংখ্যা ছিলো ১৬৯৫ জন। আর গত বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সেবা নিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সংখ্যাটা গত সপ্তাহেও কম ছিলো। এখন যারা সেবা নিচ্ছে তাদের সিংহভাগ যাদের মাঝে জ্বর-সর্দি ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাজমা ও চর্ম রোগী।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনো ঠান্ডা কখনো গরম ও বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছে নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এ সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাসজনিত রোগে মানুষ খুব সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। দিনে গরমের কারণে সমস্যা হচ্ছে। আবার রাতে ঘুমনোর সময় ঘরে ফ্যান চলায় ঠান্ডা লেগে শরীরে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থতা ও জ্বরের স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে রাস্তার ধুলোবালি উড়ে চোখমুখে জ্বালাপোড়া করছে, চোখে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। আর বাইরের বিভিন্ন খাবার ও পানি খাওয়ায় ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকেন পকস, কাঁশি, অ্যাজমা, চর্ম বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ একজন থেকে আরেক জনের মাঝে চলে যায়। এ সময় ব্যাকটেরিয়া, ইনফেকশন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যা মানুষের শরীর সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে না।

রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ মণি জানান, এখন গরমের আগমন ঘটছে। দিনে গরম থাকলেও রাতে ও ভোর বেলায় হালকা ঠান্ডা লাগছে। অনেকে বাসায় ফ্যান ছেড়ে ঘুমানোর কারণে রাতে ঠান্ডা লাগছে। আর বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি। শিশুদের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় গরমে ঘাম বসে যাচ্ছে। এ সময়ের মাঝে জ্বর-সর্দি ইনফ্লুয়েঞ্জা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, অ্যাজমা ও চর্ম রোগিদের সর্বদা সাবধান থাকতে হবে। দিনে শরীরে ঘাম না বসে, আর রাতে ঠান্ডা না লাগে- সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর সর্দিতে প্রাথমিক অবস্থায় প্যারাসিটামল খেতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক প্রবীর মোহন বসাক জানান, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বড় ছোট সবাইকে সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় মানুষের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, অ্যাজমার প্রবণতা বেড়ে যায়। তিনি জানান, রাতে বিশেষ করে ফ্যানের বাতাসে ঠান্ডা লাগে। এই সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে- যেন ঠান্ডা না লাগে। আর কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরসৌস জানান, এখন মূলত ঋতুর পরিবর্তনের সময়। প্রতি বছর এই সময়ে রোগিদের সংখ্যা একটু বেশি হয়। মেডিসিন ও চর্ম বিভাগে এই সমস্যা বেশি হয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভতিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৬৯৫ জন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম বিভাগের চিকিৎসক ইব্রাহিম মোহাম্মদ শরফ জানান, এই সময় ফাঙ্গাস ও খোঁচ-পাচড়া জাতীয় সমস্যা বেশি হচ্ছে। এখন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেবা নিতে হবে। তিনি বলেন, এই সময়ে অনেক মানুষ হাঁতুড়ি ডাক্তারের কাছে সেবা নিয়ে বিপদে পড়ে। পরে আমাদের কাছে আসছে এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো হাঁতুড়ি চিকিৎসকরে পরামর্শ নেয়া যাবে না।

মতিহার বার্তা ডেস্ক/

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply